• মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণ কমেছে ২৩ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার / ৪ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই দেশে ইলিশ সংকট ছিল প্রকট। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। জেলেরা নদী-সাগরে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ পাননি। ভরা মৌসুম শেষে ইলিশ সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রতিবছর জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরকে ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। সারা বছর আহরিত ইলিশের দুই-তৃতীয়াংশ পাওয়া যায় এই তিন মাসে। দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগে নদী ও সাগরে এ বছর ভরা মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ২৩ ভাগ কম ইলিশ আহরিত হয়েছে। এমনকি গত চার বছরের ভরা মৌসুমের হিসাবে এ বছর আহরণ হয় সবচেয়ে কম ইলিশ।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এ বছর ভরা মৌসুমের তিন মাসে বরিশাল বিভাগে ইলিশ আহরণ হয় ৭৯ হাজার ৩১০ টন। গত বছর একই সময়ে আহরিত হয় এক লাখ তিন হাজার ৬৪৭ টন। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৪ হাজার ৩৩৭ টন (২৩ শতাংশ) কম ইলিশ আহরিত হয়।

এর আগে ২০০৩ সালের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এক লাখ তিন হাজার ৭৯৭ টন এবং ২০২২ সালে একই সময়ে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫১৫ টন ইলিশ আহরণ হয়েছিল। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত তিন বছর ধরে ইলিশ উৎপাদন কমলেও এর হার ছিল খুব কম। ২০২৩ সালে আগের বছরের চেয়ে এক হাজার ৭১৮ টন কম আহরণ হয়। ২০২৪ সালে আগের বছরের সঙ্গে প্রায় সমান ছিল। ২০২৪ সালে মাত্র দেড়শ টন কম পাওয়া যায়। এ বছর আহরণ ২৩ ভাগ কমে যাওয়ায় ইলিশ সম্পদের জন্য অশনিসংকেত দিচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুধু বরিশাল বিভাগে নয়, সারাদেশেই ইলিশ উৎপাদন গত এক বছরে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কম হয়েছে। এ দুই মাসে আহরণ হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৪ টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২ হাজার ৯৪১ দশমিক ৭৮ টন কম, যা শতাংশে ৩৮ দশমিক ৯৩।

মা ইলিশের প্রজনন মৌসুম প্রতিবছর আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মাঝে রেখে ২২ দিন আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ৮০ ভাগ মা ইলিশ এই সময়ে ডিম দেয়। যে কারণে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ও পরবর্তী সময় আট মাস জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি কার্যকরের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর ৪ অক্টোবর শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা গত শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন এই আট মাস হবে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ কর্মসূচি পালিত হবে।

বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গত বছর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি কার্যকর করতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভূমিকায় গত বছর থেকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। বাধা দিতে গেলে রণপ্রস্তুতি নিয়ে হামলা করেন জেলেরা। ফলে গত বছর ঢিলেঢালাভাবে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন ও বেপরোয়া জাটকা নিধনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ বছরের ইলিশ উৎপাদনে। যার ফলে উৎপাদন কমেছে।

তবে এ বছর ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের বিষয়টি ছিল আরও বিতর্কিত। জেলেদের হামলা মোকাবিলা করতে প্রশাসনকে মেঘনার দুটি ঘটনায় ২৮ রাউন্ড গুলি করতে হয়। তার পরও নদী ছিল জেলেদের দখলে।

এসব বিষয়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, কয়েকটি কারণে ইলিশ উৎপাদন কমেছে। প্রধান দুটি কারণ হলো, অভ্যন্তরীণ নদী ও মোহনায় নাব্য সংকট এবং অতিরিক্ত আহরণ। এ দুটির দ্রুত সমাধান না হলে ইলিশ থাকবে না।

তিনি বলেন, অক্টোবরের দিকে ইলিশের প্রজনন হয় নদীতে। পরবর্তী সময়ে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাটকা বড় হতে সাগরে চলে যায়। বেশির ভাগ জাটকা মোহনায় নিধন হচ্ছে। ইলিশ রক্ষায় নদীতে মৎস্য অধিদপ্তরের নানা কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু সাগরে কোনো কর্মসূচি নেই। ফলে নদীতে উৎপাদন বাড়লেও সাগরে যাওয়া জাটকা আর রক্ষা হচ্ছে না। জেলেদের হামলার প্রবণতা বেড়েছে বলেও স্বীকার করেন প্রকল্প পরিচালক।

বিভাগীয় মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, সদ্য শেষ হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বিভাগের ছয় জেলায় তিন হাজার ৫৩১টি অভিযান চালানো হয়। এতে এক হাজার ৩৬৩টি মামলা দায়ের ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৮৯৩ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২২ দিনে অভিযান হয়েছিল তিন হাজার ৩৯৪টি। এক হাজার ৫৭টি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৬৮১ জনকে। এ হিসাবে দেখা যায়, এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড দুই-ই গত বছরে চেয়ে বেশি হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/