• শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কুয়াকাটায় ৩ লক্ষাধীক টাকার ইয়াবা ও তৈরির কাঁচামাল  ক্রিস্টাল আইচ সহ আটক -৪  জুলাই সনদ ঘোষনার দাবিতে বরিশালে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় কৃষক বাজারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক  এ সরকার দেশের স্বার্থ বিক্রি করার জন্য আসেনি : নৌপরিবহন উপদেষ্টা নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবন থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু বর্ণাঢ্য আয়োজনে বরিশালে বাংলানিউজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন শ্রমিক কল্যাণের উদ্যোগে জুলাই যোদ্ধাদের জন্য দোয়া মাহফিল অসহায়দের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন ও ভ্রাম্যমান কফি মেকার বিতরন এলপি গ্যাসের ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম কমল ৩৯ টাকা সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য : যুবক আটক

পানি নিয়ে ‘অমৃত’র অনাচার

আরিফ আহমেদ মুন্না, বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি / ২৪ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

ভূগর্ভের পানি তুলে বোতলজাত করে ব্যবসা করছে ‘অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট’ নামে একটি কোম্পানি। বাবুগঞ্জের রহমতপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে কারখানার জন্য একটি গভীর নলকূপের অনুমোদন নেয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটারের অনুমতি নিয়ে আরও তিনটি কূপ স্থাপন করে এক লাখ লিটার পানি তুলে বিক্রি শুরু করে। পানি নিয়ে অমৃতের এ অনাচারে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পানির জন্য হাহাকার : জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবন, কারখানা নির্মাণ এবং এসবের জন্য পানির চাহিদা মেটাতে বাবুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসানো হয়েছে। এতে পানির স্তর নেমে গেছে। ৮০ ভাগ নলকূপ এখন অকেজো। আগে যেখানে ৭৫০ থেকে ৮০০ ফুট নিচে গেলে নলকূপে মিলত বিশুদ্ধ পানি, সেখানে এখন সাড়ে ৯০০ ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি তোলা যাচ্ছে না। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে ছয় ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রামে।

সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মাধবপাশা ইউনিয়নের। এখনই পদক্ষেপ না নিলে উপজেলাজুড়ে পানির হাহাকার আরও বাড়বে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুমন বলেন, অমৃত গ্রুপ পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েছে কিনা, সেটি তদন্তের পর সত্যতা পেলে কেবল সংস্থাটিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে; এর আগে নয়।

এদিকে, পানি নিয়ে অমৃতের অনাচার থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী এম মাসুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, অমৃত গ্রুপ সরাসরি ভূগর্ভ থেকে মোটা পাইপ ও পাম্পের সাহায্যে লাখ লাখ লিটার পানি তুলে বোতলজাত করে বিক্রি করছে। তাদের বলা হয়েছে, পানি বিক্রির ব্যবসা চালাতে হলে নদী কিংবা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। ৯ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

মাধবপাশা ইউনিয়নের পূর্ব পাংশা গ্রামের শাহনাজ পারভীনের অভিযোগ, তাঁর বাড়ির গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। আশপাশের বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। কিছুদিন ফিটকিরি দিয়ে, ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পুকুরের পানি পান করেছেন। বর্তমানে এক কিলোমিটার দূরে সিকদারবাড়ির হাউজিংয়ের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। সেখানেও কয়েকবার চাপার পর নলকূপ থেকে পানি ওঠে।

যেভাবে অনিয়মের শুরু : মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামে দেড় যুগ আগে অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের যাত্রা শুরু। প্যাকেট গুঁড়া মশলা, বোতলজাত সরিষার তেল বাজারজাত করত প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালে ওয়ারপো থেকে যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বোতলজাত (অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটার) পানি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। পুরোনো কারখানার এক পাশে ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন করে তারা। প্রথমে একটি ছয় ইঞ্চি ব্যাসের কূপের অনুমোদন নিয়ে পরে অবৈধভাবে আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের অনুমতি পেলেও চারটি কূপ থেকে গড়ে এক লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করেছে। অভিযোগ পেয়ে কারখানা পরিদর্শনে যায় ওয়ারপো পরিদর্শক টিম।

যা বলছে ওয়ারপো : ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ৯৬০ ফুট গভীরতায় ৬ ইঞ্চি ডায়ামিটার পাইপের সাহায্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের জন্য আবেদন করেছিল। ১৬ হাজার লিটার পানি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা আরও তিনটি কূপের মাধ্যমে ৮০ হাজার লিটার পানির জন্য আবেদন করে। এ আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এরপরও তারা বড় একটি কূপ থেকে ৩৫ হাজার লিটার পানি তুলছে এমন প্রমাণ পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম রয়েল বলেন, অনুমোদনের আগে অন্য কোনো কূপ থেকে পানি তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অমৃত গ্রুপকে সাবধান করা হয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অমৃতের প্রোডাকশন ম্যানেজার বিজয় কৃষ্ণ দে। তাঁর দাবি, ১৬ হাজারের অনুমতি থাকলেও তারা প্রতিদিন ১৪ হাজার লিটার পানি আহরণ করছেন। এতে এলাকাবাসীর টিউবওয়েলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি পানি সিটি করপোরেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করছে। তবে ভূগর্ভের পানি তুলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। কাগজপত্র অমৃত গ্রুপের হেড অফিসে রক্ষিত আছে বলে দাবি তার।

বরিশাল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান, অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টসের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বা অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটারের নামে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আলাদা ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে কিনা জানা নেই।

ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অমৃত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা কোন প্রক্রিয়ায় কী পরিমাণ পানি ভূগর্ভের উৎস থেকে তুলেছে, তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/