বরিশালের ৩৩২ কোটি টাকার আধুনিক সাইলো কার্যক্রমে নেই গতি। বকেয়া বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দুর্যোগকালীন খাদ্য সংরক্ষণ বন্ধ।
বরিশালের কৃষকদের উৎপাদিত চাল সংরক্ষণে আধুনিক সাইলো নির্মাণ করা হলেও কার্যক্রমে নেই গতি। অর্থ বরাদ্দ, জনবল সংকটসহ নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে চাল সংরক্ষণ কার্যক্রম। এ ছাড়া সেখানে কর্মরতদের বেতন-ভাতাও বন্ধ রয়েছে গত পাঁচ মাস ধরে।
দুর্যোগকালীন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বরিশালে নির্মাণ করা হয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সাইলো। চলতি বছরের আগস্টে চালুর পর জনবল ও অর্থ সংকটসহ নানা কারণে চাল সংরক্ষণ করা যায়নি সেখানে।
৩৩২ কোটি টাকায় নির্মিত সাইলোটি পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। চালু রাখতে দেওয়া হয়নি অর্থ বরাদ্দ। এ ছাড়া গত জুন থেকে বেতন পাচ্ছেন না সেখানকার কর্মীরা। এমনকি বকেয়া পড়েছে বিদ্যুৎ বিলও।
কর্মীরা বলছেন, আমরা জুন মাস থেকে সাইলোতে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত বেতন পাইনি, আদৌ পাব কিনা তা তাও জানি না।
সাইলোর প্রধান সহকারী মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, বরিশাল স্টিল সাইলোতে গত জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩০ লক্ষ টাকা শুধু বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। ট্রাকে চাল ওঠা-নামায় শ্রমিকদের বিল বকেয়া পড়েছে চার লাখ টাকা। বাকি পড়েছে দৈনন্দিন কার্যক্রমের খাতা-কলম থেকে শুরু করে টিস্যু পেপারের বিলও। আর্থিক বরাদ্ধ না পেলে প্রতিষ্ঠানটি যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় কীর্তনখোলা নদীতীরে সাত একর জায়গাতে বিশালাকার এই খাদ্য সংরক্ষণাগারে নেই নিরাপত্তা কর্মীও।
সাইলোর নিরাপত্তা সুপারভাইজার নাসরিন আক্তার বলেন, আমাদের এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। জানুয়ারি মাসে আমরা এক প্লাটুন আনসার চেয়েছিলাম, দেওয়া হয়নি। পরে ১৫ জন চেয়েছি তাও দেওয়া হয়নি। আমাদের পুরো জেটি নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এখানে লোকসংখ্যা এতই কম যে দিনের বেলায় অফিসের কাজ করে আমাদেরকেই রাতে নৈশ প্রহরীর কাজ করতে হচ্ছে।
শত শত কোটি টাকায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি কাজে আসছে না, শুধু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে। সাইলো পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কর্মকর্তারা।
সাইলো সুপার রাকেশ বিশ্বাস বলেন, ৪৩ জন জনবলের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১৯ জন। নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত ১৫ জন আনসারের বিপরীতে কেউই নেই।
তিন বছরের জন্য ৫ হাজার কেজি চাল সংরক্ষণ করা যাবে এই সাইলোতে। যে কোনো দুর্যোগে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এটি হতে পারে বড় সহায়।
বরিশাল খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের ৪ জেলাসহ দক্ষিন উপকূলের মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার দীর্ঘদিন মজুদ রাখার উপযোগী আধুনিক ও উন্নত মানের খাদ্য সংরক্ষনাগার নির্মান করছে। এই সংরক্ষনাগারে একসাথে ৪৮ হাজার মেট্রিকটন চাল মজুদ রাখা সম্ভব। পৃথক পৃথক ১৬টি বিন এর মাধ্যমে প্রতিটি বিনে ৩ হাজার মেট্রিকটন চাল ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন হবে এটি।
ইতোমধ্যে সাইলো পাইল, ফাউন্ডেশন করে স্টিল স্টকচার নির্মান করা হয়েছে। নদী ও সড়ক পথে চাল আসলে তা জেটি থেকে কনভেয়ার বেল্ট এর মাধ্যমে অটোমেশনে সংরক্ষনাগারে আসবে এবং এক একটি বিনে গিয়ে মজুদ হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক এর যৌথ অর্থায়নে ৩ শত ৬২ কোটি ৪৩ লাখ ৪১২ হাজার টাকা ব্যয়ে চাল সংরক্ষণের জন্য বরিশাল নগরীর ৩০ গোডাউন এলাকায় ২১ বিঘা ( ৫ একর ২০ শতাংশ) জমিতে বিশ্ব মানের এই সাইলো নির্মান করা হয়েছে। নির্মিত এই আধুনিক খাদ্য সংরক্ষনাগার (সাইলো) নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে জয়েন্ট ভেঞ্চার অব কনফিডেন্স ইনফ্রকচার লিমিটেড, বাংলাদেশ এবং দি জিএসআই গ্রুপ এলএলসি, ইউএসএ ( সিআইএল-জিএসআই জেভি) নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ২২ জুন শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে এই মহা কর্মযজ্ঞ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
কনফিডেন্স ইনফারাকেস্টাল পিএলসি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, কাঠামোগত সব ধরনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের উধর্তন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন এখন সরকারের অনুমতি পেলেই চাল সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: আবদুর রহিম বলেন, প্রকল্পকাজ করতে প্রথমে জমি সংক্রান্ত জটিলতায় এবং পরে জেটি নির্মাণের সময় বর্ষা মৌসুমে নদীর জোয়ার-ভাটার বিড়ম্বনা ও এলসি খোলা নিয়ে জটিলতায় মালামাল বিদেশ থেকে আনতে সময়ক্ষেপনে কাজ শেষ করতে কিছুটা বিলম্ব হলেও যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা বলছেন, এখানে ৫০ কেজি থেকে শুরু করে দুই কেজি, এক কেজি চাল অটোমেটিক পদ্ধতিতে প্যাক করা যাবে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ৯০ হাজার টন খাদ্য মজুতের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সাইলো বরিশালের খাদ্য মজুতের বড় সংরক্ষণাগার হবে এটি। যে কোনো দুর্যোগের পর ফসল ওঠা পর্যন্ত খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হবে। বিশাল এ প্রকল্প পরিচালিত হবে সর্বোচ্চ ৫০ জন জনবল দিয়ে। এ কারণে এটি হবে ব্যয় সংকুচিত প্রকল্প। এর পরিচালনা ব্যয় হবে খুবই কম এবং খাদ্যমান নিশ্চিত হবে সম্পূর্ণটা। সম্পূর্ণ অত্যাধুনিকভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করে এখানে খাদ্যের সংরক্ষণ হবে। দুর্যোগকালে বরিশালের ছয় জেলায় দ্রুত তা সরবরাহ করা যাবে নৌ ও সড়কপথে। প্রায় দু লক্ষ শ্রমিক এই সাইলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পরিশ্রম করেছেন। সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে এই সাইলো নির্মান হয়েছে।
https://slotbet.online/