চলতি সপ্তাহের লাগাতার বিদ্যুৎ ঘাটতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ঘাটতি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলছে। সরকারি-বেসরকারী দপ্তর এবং শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থা ছাড়াও শিল্প-বানিজ্যকেও স্থবির করে দিচ্ছে। ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর সান্ধ্য পীক আওয়ারে প্রায় ৮শ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সাড়ে ৩শ মেগাওয়াট এবং ডে-পীক আওয়ারে ৭শ মেগাওয়াটের বিপরীতে আড়াইশ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতিতে বরিশাল অঞ্চলের পুরো আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় গ্রীড থেকে সরবরাহের ফলে বরিশাল অঞ্চলের ৪২টি উপজেলাজুড়েই দিনরাত বিদ্যুৎ রেশনিং’এ নাকাল হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। চলতি সপ্তাহের কয়েকদিন ধরে সান্ধ্য পীক আওয়ার থেকে মধ্যরাত পেরিয়ে ভোররাত পর্যন্ত এ বিদ্যুৎ ঘাটতি বুধবার সকাল থেকে দিনজুড়েই অব্যাহত ছিল। যা সান্ধ্য পীক আওয়ারে আরো প্রকট আকার ধারন করে।
বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী- ওজোপাডিকো এবং বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সহ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন মহলে আলাপ করা হলে সকলেই ‘দেশব্যাপী উৎপাদন ঘাটতির কারণে জাতীয় গ্রীড থেকে সরবরাহ হ্রাসের ফলেই বর্তমান সংকট সৃষ্টি হয়েছে’ বলে জানান। তবে কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। বিভিন্ন কারণে একাধিক উৎপাদন ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়ে সংকট উত্তরণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান কর্তাব্যক্তিরা।
এদিকে বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে বরিশাল অঞ্চলের ৪২টি উপজেলা হাসপাতাল সহ জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল এবং ১ হাজার শয্যার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও নানামুখি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালগুলোতে জরুরী অপারেশন পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। একই কারণে শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যেও বিপর্যয় নেমে আসছে।
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দুইয়ের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী বিপুল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, জাতীয় গেট থেকে সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়ে আমাদের লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ বরিশাল ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজন এর তুলনায় বরিশালে জাতীয় গেট থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তিন ইউনিটবিশিষ্ট ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে চালু থাকা একমাত্র ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এক নম্বর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুই নম্বর ইউনিট।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহেও কোনো ইউনিট মেরামত করা সম্ভব নয়। ফলে এক সপ্তাহ এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এক নম্বর ইউনিটটি এ সপ্তাহের মধ্যে চালু হতে পারে। তিন নম্বর ইউনিট কবে চালু করা সম্ভব হবে–এটি বলা যাচ্ছে না।
২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটটি চালু অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। তৃতীয় ইউনিটের গভর্নর ভাল্ব স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিট দিয়ে প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছিল। সেটিও গত শনিবার রাতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
https://slotbet.online/