ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে দানা বাঁধছে বরিশালের একটি বিশ্ব বিদ্যালয়সহ সরকারি কলেজগুলোতে। দফায় দফায় কর্মসূচি দিচ্ছে বিএম কলেজ ও হাতেম আলী কলেজে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও জোর দিয়ে চাইছে বাকসু নির্বাচন।
বরিশালের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্রজমোহন কলেজ। এই কলেজের ছাত্ররাই দেশের অনেক বড় জাতীয় নেতা হয়েছেন অনেকেই। অথচ বিএম কলেজে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাকসু নির্বাচন নেই জানিয়ে এবার রাজপথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। গত এক মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সূত্রে জানা গেছে সরকারী ব্রজমোহন (বিএম কলেজ) এর ছাত্র সংসদ বাকসুর নির্বাচন হয়না প্রায় ৩ যুগ ধরে। যদিও বিগত সরকারের আমলে একবার নির্বাচন ছাড়া এখানে তৎকালিন মেয়র শওকত হোসেন হিরন তার অনুসারী ছাত্র লীগ নেতাদেও দিয়ে একটি কমিটি করে দেয়। ওই কমিটি হিরনের ৫ বছর মেয়াদেই সচল ছিলো। এর পর তা বিলুপ্ত হয়ে পরে। সেই থেকে এই বাকসু ভবন তালাবদ্ধ পরে আছে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সরকারি বিএম কলেজ শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমান নাইম বলেন, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। দুঃখজনকভাবে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ হারাচ্ছে। আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি কেবল অযৌক্তিক নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক বঞ্চনা।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাকসু নির্বাচন কেবল ভোটের একটি প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত করা, অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব তৈরি করা এবং আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তৈরির এক মহত্তম সুযোগ। নেতৃত্বহীন প্রজন্ম কখনোই জাতির জন্য আশীর্বাদ নয়, তাই নির্বাচনকে কোনোক্রমেই আর বিলম্বিত করা যাবে না।
ডবএম কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো: সাব্বির রহমান বলেন, ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা সমাধানে আজ অমুক ভাই তো কাল তমুক ভাইর নামে স্লোগান তুলতে বাধ্য হচ্ছে। যা একটি সুন্দর সাবলীল ক্যাম্পাস গড়ার অন্তরায়। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। আমরা দ্রুত বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবী করছি।
অপরদিকে, প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরুলেও ছাত্র সংসদের স্বাদ পায়নি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে ববি শিক্ষার্থীরা মিছিল, গণস্বাক্ষর, গণভোট করে দাবি তুলেছেন বাকসু নির্বাচনের।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। ডাকসু এবং জাকসু ইলেকশনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাস গুলো তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা অসাধারণ বৈচিত্র্য ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচিত ছাত্রসংসদ গুলো কার্যকর তৎপরতা লক্ষণীয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেক শিক্ষার্থী ছাত্রসংসদের নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ববি শাখার সভাপতি হাসিবুল হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদের একক বা কেন্দ্রীয় কোনো নেতৃত্ব হলো ছাত্র সংসদ। সকল সুবিধা অসুবিধার কথা শিক্ষার্থীরা তাদের নির্বাচিত ছাত্র সংসদ প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরবে। আর প্রতিনিধিরা সেগুলোর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
কিন্তু ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা সমাধানে আজ অমুক ভাই তো কাল তমুক ভাইর নামে স্লোগান তুলতে বাধ্য হচ্ছে। যা একটি সুন্দর সাবলীল ক্যাম্পাস গড়ার অন্তরায়। তাছাড়া ছাত্র সংসদ না থাকলে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র উইং একচ্ছত্রভাবে আধিপত্যবাদ কায়েম করছে। হলরুম দখল, দল করলে হলে সিট দেয়া, প্রোগ্রাম আয়োজনে জোরপূর্বক অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানাবিদ সমস্যা অবসানে ছাত্র সংসদ অতীব জরুরী। শিক্ষার্থীদের পক্ষে উচ্চ আওয়াজও কেউ তুলতে পারে না একক নেতৃত্ব না থাকায়। তাই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সবকিছুর উর্ধ্বে ছাত্র সংসদ। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা ববিতে ছাত্র সংসদ চাই। এমনকি দেশের প্রতিটা ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ দ্রুত কার্যকর এখন সময়ের দাবি।
বরিশাল নগরীর আরেক দাপুটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজেও আন্দোলনের দানা বাধেছে ছাত্র সংসদের দাবিতে। ভোট চাইছে, সরকারি বরিশাল কলেজের ছাত্ররাও।
সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর সভাপতি গাজী মুহাম্মাদ রেদোয়ান বলেন, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত। এই কলেজে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যারা শুধু একাডেমিক পড়াশোনার গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, বরং নেতৃত্ব, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমে সমৃদ্ধ একটি প্রজন্ম গঠনে আগ্রহী।
বহু বছর ধরে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুপস্থিত। এটি নেতৃত্ব বিকাশের পথকে ব্যাহত করছে। ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংগঠন, যা শিক্ষার্থীদের সমস্যা, দাবি, এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড কলেজ প্রশাসনের নিকট উপস্থাপন করে। তাই নির্বাচনের বিকল্প নেই।
মূলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেখেই বরিশালেও ভোটের পক্ষে আন্দোলনে নামতে শুরু করেছেন বিশ্ব বিদ্যালয় ও কলেজ গুলোর শিক্ষার্থীরা। এখানকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ যুগ, কোনটির ২ যুগ কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই বরিশালের কলেজগুলোতে। ২৪র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র নেতারা যে স্বপ্ন দেখিয়েছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের, তারাই এখন চাচ্ছে আগামীর বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হোক।
https://slotbet.online/