হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। দীর্ঘ এক যুগ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আবার নির্বাচনের প্রত্যাশায় উজ্জীবিত। বর্তমান সরকার প্রধান ড. ইউনুস ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর এ অঞ্চলে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে।
যদিও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কিছু দল পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে, বিএনপি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—তারা দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকাল জানায়, দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপি প্রার্থীর সবুজ সংকেত দিয়েছে। তবে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, কাউকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি।
২৩ সেপ্টেম্বর মেহেন্দীগঞ্জে সেচ্ছাসেবক দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি এস. এম. জিলানী ঘোষণা দেন, আসন্ন নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হবেন সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা অনেক নেতাকর্মী আশ্বস্ত হয়েছেন এবং মাঠে সক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় একটি টিম ইতোমধ্যে ধানের শীষের পক্ষে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেছে।
২৬ সেপ্টেম্বর আন্দারমানিক ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আ. রহমান ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন,
“ধানের শীষ আমাদের আবেগের জায়গা। যে-ই প্রার্থী হোক, তিনি আমাদের। তবে যোগ্য ও পছন্দের প্রার্থী রাজীব আহসানকে পেয়ে আনন্দটা বেশি।”
একই দিনে গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে মহিলা সংগঠন ও সেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও রাজীব আহসানের জন্য দোয়া কামনা করেন এবং তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করেন।
উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব দুলাল সরদার বলেন,
“একটি মহল ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা সতর্ক করছি এবং জনগণের কাছে তারেক রহমানের ভাবনাগুলো পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি জনগণকে জানাচ্ছি রাজীব আহসানের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কেও।”
তিনি আরও দাবি করেন,
“বিগত দিনের কয়েকটি প্রোগ্রাম একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়—কিভাবে রাজীব আহসানের জনজোয়ার দিন দিন বাড়ছে এবং এক সময়ে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিতরা এই জনজোয়ারে অংশ নিচ্ছেন। আমরা এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।”
উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মীর মাহফুজুর রহমান এলিট বলেন,
“সংগঠনের বৃহৎ অংশ রাজীব আহসানের পক্ষে মাঠে কাজ করছে। বাকিদের সঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। অতি শিগগিরই সবাইকে এক কাতারে দেখতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।”
পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে প্রচারণা অব্যাহত ছিল দিনভর। স্থানীয় কাউরিয়া বন্দরে ধানের শীষ প্রতীকে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও রাজীব আহসানের সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্দর ব্যবসায়ীদের কাছে দোয়া কামনা করেন নেতাকর্মীরা।
এ সময় মিছিলের প্রধান অতিথি হিজলা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন খোকনের কাছে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“আমাদের সংগঠনে বড় কোনো গ্রুপিং নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকাটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। রাজীব আহসানের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে, যা ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই ঘোষণার মাধ্যমে কিছু সময় হাতে থাকতেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে সহযোগিতা করছে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা থাকলেও মাঠে নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যেই রাজীব আহসানের পক্ষে সক্রিয় হয়েছেন।
https://slotbet.online/