 
						বরিশালের শের-ই-বাংলামেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) আঙিনায় দাঁড়ালেই চোখে পড়ে বৈপরীত্যের ছবি। এক পাশে বারান্দার মেঝেতে ক্যান্সার রোগী স্যালাইন হাতে শুয়ে আছে, পাশে কাঁদছে সন্তানসহ স্বজনরা। অন্য পাশে মাথা উঁচুকরে দাঁড়িয়ে আছে ১৭ তলা আধুনিক হাসপাতালের ভবন। রোগীবিহীন আধুনিক ভবনটি নিস্তব্ধ।
যেন ইট-সিমেন্টে গড়া এক স্বপ্ন, যেখানে চিকিৎসার আলো এখনো জ্বলেনি।
এ হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে একটি ক্যান্সার ইউনিট থাকলেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল। কেবল রেডিওথেরাপিনির্ভর হয়ে আছে ক্যান্সার ইউনিটটি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষকে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় রাজধানী ঢাকায়।
এতে ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে পদে পদে।
আশার যাত্রায় বিলম্বের ছায়া
২০২০ সালের নভেম্বরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বড় স্বপ্ননিয়ে শুরু হয় বিশেষায়িত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ।
শেবাচিম হাসপাতালের সামনে স্টাফকোয়ার্টার এলাকায় ১৪ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ১৭ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালের জুনেই ক্যান্সার হাসপাতালের দরজা খুলবে, কিন্তু কাজ এগোয়নি।
যন্ত্রপাতি অকেজো, বাড়ছে রোগীর চাপ
হাসপাতালের তথ্য মতে, অনকোলজি বিভাগে আছে মাত্র ২৭ শয্যার একটি ক্যান্সার ওয়ার্ড।২০০২ সালে ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা দামের একটি কোভাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন করা হয়।২০১৫ সালে সেই মেশিন অচল হয়ে পড়ে। এটি সচল থাকা অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগীকে থেরাপিদেওয়া হতো।
এ ছাড়া জরায়ু ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্রটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। রেডিওলজি মেশিন নেই, রেডিও টেলিথেরাপি মেশিন নষ্ট, তিন বছর আগে স্থাপন করা ব্রাকিথেরাপি যন্ত্রও ঠিকাদার সচল অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেটি ওই অবস্থায়ই পড়ে আছে।
রেডিওথেরাপি বিভাগের চিকিৎসক মো. মহসীন হাওলাদার বললেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৩৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। গত এক বছরে এখানে চিকিৎসা নিয়েছে চার হাজার ৮০১ জন ক্যান্সার রোগী। আশপাশের জেলা থেকেও রোগী আসছে। জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা থাকলে তাদের ভোগান্তি অনেকটা কম হতো।
হাসপাতালেরউপপরিচালকডা. এসএমমনিরুজ্জামানবলেন, ‘শুধুদালানদাঁড়ালেইহবেনা।যন্ত্রপাতি, লিফট, সাবস্টেশন, সেন্ট্রালঅক্সিজেন—এসবছাড়াহাসপাতালচালুকরাসম্ভবনয়।নির্মাণকাজ৮০শতাংশশেষহয়েছে।কিন্তুসেইভবনেরসাজসজ্জা, যন্ত্রপাতিস্থাপনেরজন্যঅনেকসময়প্রয়োজন।কবেনাগাদসেইকাজশেষকরাসম্ভবহবে, তাআমরানিজেরাইঅবগতনই।’
অপেক্ষার দিনলিপি
মিতা রানীর স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত। ভিড়ে ঠাসা ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে তাঁর স্বামী হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পাশেই ছেলে বিমল। বিমল বলেন, ‘বাবাকে ঢাকায় নিতে পারব না, টাকাই নেই। এখানে কেমো দিচ্ছি, কিন্তু জায়গা পাই না। যদি নতুন হাসপাতালটা চালু হতো, এত কষ্ট পেতে হতো না।’
বরিশাল জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিকুল আলম। দুরারোগ্য ক্যান্সার তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে, ঢাকায় যেতে হয় থেরাপি নিতে। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের চিকিৎসাব্যবস্থা সহজ ও যুগোপযোগী করতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
https://slotbet.online/