চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চলছে দফায় দফায় সংঘর্ষ। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত টানা সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও প্রক্টরসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদেরকে চবি মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় আগামীকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক বন্ধ করে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন। হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন তারা। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ফের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। এক প্রান্তে কয়েকশ শিক্ষার্থী এবং অপর প্রান্তে স্থানীয়রা স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিরাপত্তা বাহিনী তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আরো অন্তত দু’জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের পর রোববার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। তবে ক্লাস চালু থাকবে। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য শাটল ট্রেন নিয়মিত সূচি অনুযায়ী চলবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রক্টর ও পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত সোয়া ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ২ নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ৭০ শিক্ষার্থী আহত হন। প্রক্টরিয়াল বডির দুই শিক্ষকও আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় এক নারী শিক্ষার্থীকে ভবনের দারোয়ান মারধর করার ঘটনায়। শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রী ভাড়া বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে দারোয়ানের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দারোয়ান তাকে মারধর করেন। পরে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। এ সময় স্থানীয় লোকজন মাইকিং করে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা চালায়। অন্যদিকে স্থানীয়দের দাবি, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরাই আগে হামলা চালায় এবং ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।
https://slotbet.online/