ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোরহানউদ্দিন কামিল (আলিয়া)মাদ্রাসার দ্বিতল একাডেমিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা কয়েকদিন পরপর খসে পড়ছে। বৃহস্পতিবার হঠাৎ দোতালায় ওঠার সিঁড়ি বরাবর বড় অংশ নিয়ে ধসে পড়ে। ওই সময় ওই স্থানে কেউ থাকলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা হতে পারতো। ছয়মাস আগে ক্লাস চলাকালিন সময়ে ছাদের পলেস্তারা খসে আলিম শ্রেণির ৪ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষ দ্বিতল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপরের তলার চারটি ক্লাশের শ্রেণিকার্য অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি দু’টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। এতে কক্ষের প্রযোজনীয়তা বাড়ছে। ফলে মাদ্রাসায় শ্রেণিকক্ষের অভাবে চরম পাঠদান সংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুড়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার পুরোনো ভবনের নীচতলার করিডোরের সিঁড়ির কাছে খসে পড়া পলেস্তারা। উপরের দিকে তাকালে খসে পড়া অংশে মরচে ধরা রড দেখা যায়। দোতালার করিডোরে অন্তত: দশটি স্থানে ধস দেখা যায়। শ্রেণিকক্ষের ভিতরে একই অবস্থা। খসা অংশের নতুন পলেস্তারা দেখে বুঝা যায় সম্প্রতি এটি সংস্কার করা হয়েছে। রডে মরিচার কারণে পলেস্তারা খসে পড়ছে। পূর্ব প্রান্তের কক্ষে ছাদ ফাঁক হয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। প্রশাসনিক ভবনে পানি চুঁইয়ে ছাদে শ্যাওলা জমে থাকতে দেখা যায়।
এ মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৬মাস পূর্বে মাদ্রাসার ক্লাস চলাকালিন সময় মাদ্রাসার ছাদের পলেস্তারা খসে আলিম শ্রেণির ৪ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ওই সমস্ত কক্ষে যেতে আমাদের ভয় হয়। শ্রেণীকক্ষের অভাবে আমাদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই মাদ্রাসার নতুন একাডেমিক ভবন দাবী করছি।
এ মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এএইচএম অলিউল্যাহ জানান, ‘মাদ্রাসার নিজস্ব অর্থায়নে ১৯৭৭ সালের দিকে সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম পাকা ভবন নির্মান কাজে হাত দেন। কোন প্রকৌশলীর নকশা ছাড়াই প্রথমে পঁনের ইঞ্চি বেইজের উপর দশ ইঞ্চি ব্রিক ওয়ালের ভবন নির্মান করা হয়। ছাদ ছাড়া কোথাও রডের কলাম করা হয়নি। একতলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন এভাবেই শেষ করা হয়। তিনি আরো জানান, অবসরে যাওয়া সর্বশেষ অধ্যক্ষ মরহুম মাও. মফিজুল হকও মাদ্রাসার অর্থায়নে ১৯৮৫ সালের দিকে দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ করেন। ওই সময় নির্মান কাজে আরসিসি পিলার ও কলাম করা হয়েছে।’
সরজমিনে পরিদর্শন করে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার নির্বাহি প্রকৌশলী আ. সাত্তার জানান, রডে মরিচা সহ অন্যান্য উপসর্গ দেখে বুঝা যায় এ ভবন আর সংস্কারের পর্যায়ে নেই। এটাকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
অত্র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ, বি আহমদ উল্যাহ আনছারী জানান, ‘এ মাদ্রাসার বয়স একশ’ চার বছর। মাদরাসার সিংহভাগ অবকাঠামো মাদ্রাসার অর্থায়নে করা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে একটি সাইক্লোন সেল্টার কাম একাডেমিক ভবন সরকারিভাবে পাওয়া গেছে। ওই স্থানে মোটামুটি আটটি শ্রেণির ক্লাশ করা সম্ভব। এছাড়া ২০০৪-০৫ অর্থবছরে চার কক্ষের ভোকেশনাল ভবন করা হয়। ওই ভবন প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে বর্ষায় এ ভবনের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। এ ভবনটি উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা গেলে নীচতলা যেমন রক্ষা হয় তেমনি চারটি কক্ষের সংস্থান হয়। মাদ্রাসার পুরাতন ভবনের দ্বিতল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওইস্থানে আর ক্লাশ নেয়া যাচ্ছেনা। এছাড়া বিজ্ঞান ভবনের অবস্থাও নড়বড়ে। ব্যক্তির দানে নির্মিত পাঁচ রুমের একমাত্র ছাত্রাবাসটিরও করুণ দর্শা।’ প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষের সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে একটি নতুন একাডেমিক ভবন বরাদ্দ সহ প্রসাশনিক ভবন উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করার দাবি জানান।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নিবাহি অফিসার (ইউএনও) মো: রায়হান-উজ্জামান জানান, ‘নতুন ভবন করার আবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
https://slotbet.online/