• সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১০ অপরাহ্ন

বরিশালের ১৫৮৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হয়না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস

মাহিমুল হাসান এমদাদ / ৩৪ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫

বরিশালের ১৫৮৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ব্যবহার ও সংরক্ষনের অভাবে ল্যাপটব অকেজো হয়ে পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্ঠি হওয়ার কথা যানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এসকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানান, সরবরাহের ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই সরবরাহ করা ল্যাপটব নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। তবে জেলার কোন কোন বিদ্যালয়ের সপ্তাহে একদিন মাল্টিমিডিয়ার আওতাধীন ক্লাশ নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষকরা।
অভিযোগ রয়েছে মাল্টিমিডিয়া পদ্বতিতে সৃজনশীল পদ্বতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য অধিদপ্তরের দেয়া ল্যাপটপ, প্রজেকটর সহ অন্ন্যন্য সরঞ্জাদী বিদ্যালয়ে থাকলেও তা বেশির ভাগ সময় প্রশিক্ষকরা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। আর এসব দেখভালের জন্য থাকা সরকারী কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে গেলে নষ্ট বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
ফলে মাল্টিমিডিয়া পদ্বতিতে সৃজনশীল পদ্বতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এবিষয়ে সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষনের পাশাপাশি তদারকি না থাকলে সরকারের কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে দাবী শিক্ষার্থীর অবিভাবকদের।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, বরিশালের ১৫৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন ধাপে এই ল্যাপটপ, প্রজেকটর সহ অন্ন্যন্য সরঞ্জাদী সরবরাহ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রথম ধাপে ২০১৩, দ্বিতীয় ধাপে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সর্বশেষ এই সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়।
এর মধ্যে সর্ব শেষ ধাপে বরিশাল জেলার বরিশাল সদর উপজেলায় ১২৭, গৌরনদীতে ৪০, আগৈলঝাড়ায় ৪৭, বাবুগঞ্জে ৩৫, উজিরপুরে ৭৫, বানারীপাড়ায় ৪৫, হিজলায় ৫০, মুলাদীতে ৬৭, বাকেরগঞ্জে ৯৯ ও মেহেন্দিগঞ্জে ৯৪টি সরকারী প্রাধমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, প্রজেকটর সহ অন্ন্যন্য সরঞ্জাদী সরবরাহ করা হয়েছে। এর আগে বাকি সকল বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, প্রজেকটর সহ অন্ন্যন্য সরঞ্জাদী সরবরাহ করা হয়েছে। যার সবগুলোই অচল হয়ে পওে আছে বলে দাবী খোদ বিদ্যালয় প্রধানদের।
অভিবাবকরা অভিযোগ করেছেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ অর্থাৎ ল্যাপটপের ও প্রজেক্টর মাধ্যমে শৃজনশীল পদ্বতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন ২০১৮ সাল থেকে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ না নিয়ে শিক্ষাদানের ঐ সব যন্ত্রপাতি অফিসের আলমারির ভিতরেই রাখায় তা এখন অকেজো হয়ে পরেছে। আর বিদ্যালয়ে অধিদপ্তরের কোন কর্তা এলেই ঐ দিনই মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নিয়ে দেখায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। তবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষকরা জানিয়েছেন মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়ার জন্য সংশ্লিস্ট ১২ থেকে ২৬ দিনের যে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে তা শিক্ষার্র্থীদের পাঠদানের জন্য অপ্রতুল। প্রশিক্ষরা জানিয়েছেন মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়ার জন্য নিম্মতম ৬ মাসের ট্রেনিং প্রয়োজন।
বরিশাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশ গড়ার ঘোষনা দিয়ে ২০২৮ সালে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের এবং ইন্টারনেট পরিচালনার মাধ্যমে শৃজনশীল পদ্বতিতে শিক্ষাদানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ চালু করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সনে বরিশাল জেলার মোট একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ চালু করা হয়। আর ঐ সব বিদ্যালয়ে ৩/৪ জন শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়ার জন্য ১২ দিনের একটি প্রশিক্ষন প্রদান করা হয় যে কিভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হবে। পাশাপাশি ঐ সব শিক্ষকদের ট্রেনিং শেষে মাল্টিমিডিয়া আওতাধীন বিদ্যালয়ের জন্য লাপটপ, প্রজেকটর, ইন্টারনেট চালানো মডেম প্রদান করা হয়।
সরজমিনে মাল্টিমিডিয়া আওতাধীন বরিশাল নগরীর আমতলা মোড় এলাকার কিশোর মজলীস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় যাওয়া হয়। এ সময় অভিবাবকরা জানান, ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হয় কিনা আমাদেও জানা নেই। অভিবাবকরা জানান, কোন ক্লাশ নেয়া হয় না। তবে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আছসা পারভীন জানান, মাল্টিমিডিয়ার আওতায় ক্লাশ নেয়া হয় সপ্তাহে ২/৩ দিন। তিনি আরও জানান মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়ার জন্য ১২, ১৫ ও ২৬ দিনের ট্রেনিং অপ্রতুল। আর জন্য তিনি ৬ মাসের কোর্সের দাবি জানিয়েছেন। তবে এখানকার প্রথম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সাফিন বলেন, আমাদেও মাঝে মধ্যে প্রজেক্টরে ছবি দেখায়।
নগরীর ভাটারখাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিজা খন্দকার জানান, তাদের বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষিকা মাল্টিমিডিয়ার ক্লাশ নেয়। আর ভাটারখাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন বলেন, কোন দিনই এখানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হয়নি। আমরা এই ক্লাস পাই নাই কখনও। তবে মাঝে মধ্যে ছবি দেখায়।
এদিকে মাল্টিমিডিয়া আওতাভুক্ত বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোজ নিয়ে জানাগেছে ঐসব বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া ক্লাশের জন্য ল্যাপটপ, প্রজেকটর ও ইন্টারনেট চালুর যন্ত্রপাতি অকার্যকর। উপজেলার বিদ্যালয়ের ঐসব ল্যাপটপ, প্রজেক্টর শিক্ষকদের বাসায় কিংম্বা বিদ্যালয়ের আলমারির মধ্যে থাকে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন বড় কর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে তখনই মাল্টিমিডিয়া ক্লাশের জন্য ল্যাপটপ সহ অন্নন্য যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মধ্য আজিমপুর সরকারী প্রাথতমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হাসান মাহমুদ সাঈদ জানান, ল্যাপটপ, প্রজেকটর ও ইন্টারনেট চালুর যন্ত্রপাতি দেওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই ল্যাপটপটি অকার্যকর হয়ে পড়ায় সেই থেকে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ল্যাপটপ মেরামত বা নতুন সরবরাহ করা হলেই ক্লাস নেওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি। একই কথা বলেন, হিজলা উপজেলার মাউলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।
এ বেপারে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: আল এমরান খন্দকার জানান, মাল্টিমিডিয়ায় ১ম থেকে ৫ম শ্রেনীর জন্য প্রত্যেক শ্রেনীর সপ্তাহে একদিন করে ক্লাশ নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। আর মাল্টিমিডিয়ায় গনিত, ইংরেজি সহ শ্রেনীর অন্নন্য বিষয় কোমল শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ রয়েছে। যদি কেহ মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ না নিয়ে গড়িমশি করে তবে সংশ্লিস্ট বিষয় ব্যবস্থা গ্রহন করার কথাও জানান তিনি। এসবের দেখভালে বা তদারকিতে আমাদেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়োজিত আছে। তার পওে কোন সমস্যা থাকলে আমি খোজ নিয়ে দেখবো এবং ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
তিনি বলেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ, প্রজেক্টর সহ অন্নন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাশের যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়ার বিষটি তার জানানেই বলে দাবী করে বলেন, বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/