বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আমরা দল থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কেন তাহলে বসে আছে, তাদের চালায় কে? বিএনপি তো চালায় না। চালাচ্ছে সরকার। তাহলে সরকার কেন তাদের (অন্যায়কারী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? সেটি দলেরই হোক বা অন্য কোনো লোকই হোক।
কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? দলের সঙ্গে অন্যায়কারীর কী সম্পর্ক, তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না, আইনের দৃষ্টিতে তার বিচার হতে হবে।’
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত লেকশোর হোটেলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের অমর শহীদদের স্মরণে’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘পুরান ঢাকায় যে ছেলেটি মারা গেছে, তার সঙ্গে হয়তো যুবদলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু যে খুন করেছে, তাকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে ধরা হচ্ছে না? ধরা হলো অন্যদের! তাকে এখন পর্যন্ত বোধ হয় আসামিও করা হয়নি। কেন হয়নি? কেন তাকে ধরা হচ্ছে না? আমাদের পক্ষ থেকে তো একবারও বলা হয়নি যে অমুককে ধরা যাবে না, তমুককে ধরা যাবে না। একবারও তো এই কথা বলা হয়নি।
আমরা বরাবর বলেছি, অন্যাকারীর আইনের দৃষ্টিতে তার বিচার হবে। দলের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না। তাকে দল কোনো রকম প্রশ্রয় দেবে না, কেউ যদি কোনো অন্যায় করে। তাহলে প্রশাসন তাকে কেন ধরছে না? দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের যা যা করা প্রয়োজন, আমরা যেটা জেনেছি, তদন্তের পর যাদের সম্পর্কে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, দল থেকে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের স্পষ্টভাবে দেখা গেল।
কিন্তু এখনো তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটা কি সরকারের নীরব সমর্থন অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের পরোক্ষ প্রশ্রয়ের ইঙ্গিত? তাহলে কি ধরে নেওয়া উচিত, যারা দেশে গণপিটুনি, সহিংসতা এবং অস্থিরতা তৈরি করতে চায়, তারা সরকার বা প্রশাসনের কোনো অংশের নীরব সমর্থন পাচ্ছে? বা লালন-পালন করা হচ্ছে? সারা দেশের মানুষ এখন প্রশ্ন করছে, কেন সরকার নীরব রয়েছে? কেন যাদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? বিভিন্ন স্থানে নানা ঘটনা ঘটছে। আমরা খুব নিবিড়ভাবে নজর রাখছি, কারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’
আশ্বস্ত করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, যদি বিএনপি জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করাই হবে আমাদের অঙ্গীকার। প্রত্যেকটি হত্যার বিচার আমরা করব।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি।
অনুষ্ঠানে পুরান ঢাকায় মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি ঘটনার অতি দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যে ঘটনাগুলো ঘটছে সরকারকে আহ্বান জানাব, অতি দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত যারা অপরাধী, তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না। জাতি আপনাদের দায়ী করবে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়ার সময়, এসব সমস্যা তৈরি করার জন্য। বিএনপি কোনো দিন কোনো অন্যায়কে সমর্থন করেনি, কখনো করবেও না। বিএনপি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অতীতেও করেছে এবং এবারও করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন করে একটা নির্বাচন দ্রুত চাই। কারণ গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই। আর গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন নেই বলে আজকে দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটছে, আইন-শৃঙ্খলার ঘটনার ঘটনাগুলো ঘটছে, আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটছে, মৃত্যু বাড়ছে, দুবৃর্ত্তরা সুযোগ নিচ্ছে। কারণ তাদের পেছনে জনগণের সমর্থন নেই। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকার এলে নিঃসন্দেহে সেটা শক্তিশালী সরকার হবে।’
অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবরী রিজভী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
https://slotbet.online/