• বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

বরিশালে চোখ রাঙাচ্ছে ‘জলাতঙ্ক’, বন্ধ সরকারি ভ্যাকসিন কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার / ১৪ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
oplus_0

বরিশাল সদর হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর কামড় এবং আঁচড়ে আক্রান্ত মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু সরকারিভাবে ভ্যাকসিন না পেয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন তারা। কেউ কেউ দীর্ঘ ঘুরে বাইরে ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনছেন।

এ চিত্র শুধু বরিশাল সদর হাসপাতালের নয়। বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই। তবে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের প্রধান সেন্টার হিসেবে পরিচিত বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে। সংকটের কারণে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে এ হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম।

বরিশাল সিটি এবং সদর উপজেলায় কুকুর-বিড়ালসহ প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ে আক্রান্ত রোগীদের সরকারিভাবে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়ে থাকে একমাত্র বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে। বরিশালের বাইরে থেকেও ভ্যাকসিন নিতে এ হাসপাতালে আসছেন রোগীরা।

সদর হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে আসা বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ি রোডের বাসিন্দা তাসরিন জাহান বলেন, বিড়াল আঁচড় দেয়ায় ভ্যাকসিন নিতে সদর হাসপাতালে এসেছেন। এসে জানতে পারেন ভ্যাকসিন নেই। সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকাটা দুঃখজনক।

 

চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্নকাঠি গ্রামের তরুণ জানান, বিড়াল কামড় দেওয়ায় মাকে ভ্যাকসিন দিতে সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। এসে জানতে পারেন হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই। পরে চারজন মিলে পাঁচশ টাকা দিয়ে বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে হয়েছে।

পিরোজপুরের নেছারাবাদ থেকে আসা মানিক মল্লিক এবং বাকেরগঞ্জ থেকে আসা আব্দুল আউয়াল বলেন, বিড়াল কামড় দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিতে বরিশাল সদর হাসপাতালে এসেছেন তারা। কিন্তু এখানে জানতে পারেন ভ্যাকসিন নেই। পরে পাঁচজন মিলে বাইরের ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে এনেছেন। কিন্তু হাসপাতাল এবং সদর রোড এলাকার দু-একটি বাদে অন্য ফার্মেসিগুলোতেও ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে। অনেক জায়গায় ঘুরে ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে তাদের। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিনশ মানুষ কুকুর ও বিড়াল দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। চলতি ১ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৫ হাজার ৫২০ জন মানুষ কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে চার হাজার ৪৮ জন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হলেও বাকিরা বিড়ালের কামড় এবং আঁচড়ে আক্রান্ত হয়েছেন।

হাসপাতাল থেকে আরও জানানো হয়েছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারের কাছাকাছি।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, বাসা বাড়িতে বিড়াল পোষার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে রোগী বেড়েছে। গত অক্টোবরে ঝালকাঠিতে ভ্যাকসিন না নেওয়ায় জলাতঙ্কে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ কারণে মানুষের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৩০০ শতাধিক রোগী আসছে। গত দু’দিন ধরে কোনো ভ্যাকসিনই সরবরাহ নেই। ভ্যাকসিন আনার জন্য এখন প্রতি সপ্তাহে আমাদের ঢাকা যেতে হয়।

শুধু বরিশাল জেনারেল হাসপাতালেই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার প্রতিটি হাসপাতালেই ভ্যাকসিন সংকট দেখা গিয়েছে বলে বরিশাল দর্পণ কে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি বলেন, আগের তুলনায় কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের শিকার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে— যা সত্যিই দুশ্চিন্তার কারণ। তবে যে হারে রোগী বাড়ছে আমরা সেভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, বরিশাল বিভাগের প্রায় সবগুলো হাসপাতালেই এ সংকট চলছে। আমাদের মেইন সেন্টার বরিশাল সদর হাসপাতালসহ বিভাগের কয়েকটি উপজেলায় ভ্যাকসিন সংকটের কারণে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করা হয়েছে। চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করি, সংকট কেটে যাবে।

সাধারণত কুকুর-বিড়াল দ্বারা আক্রান্ত হলে দুই ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় মানুষের শরীরে। একটি র‌্যাবিস ইমোনোগ্লোবিন (র‌্যাবিস আইজি), অপরটি র‌্যাবিস। তবে সব রোগীকে ইমোনোগ্লোবিন দিতে হয় না। চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে ভ্যাকসিনের পাশাপাশি ইমোনোগ্লোবিন দেওয়া হয়। তবে শুধু মানুষের শরীরে নয়, ভ্যাকসিন দিতে হবে পোষা প্রাণীটিকে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে সচেতনতা। তা না হলে সখের প্রাণীটি ডেকে আনতে পারে মরণব্যাধি জলাতঙ্ক, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/