• সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন

যেভাবে উদ্ধার হলো তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ

স্টাফ রিপোর্টার / ৯ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে প্রায় ৩৩ বছর আগে ডুবে গিয়েছিল একটি পণ্যবাহী জাহাজ। দীর্ঘ সময়ে নদীর তলদেশে ডুবে থাকা জাহাজটির ওপর পলি জমে সেখানে চর গড়ে ওঠে। এক যুগের বেশি সময়ের প্রচেষ্টার পর অবশেষে সম্প্রতি সেই চর খনন করে প্রায় ৭০ ফুট নিচ থেকে জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর থেকে শ্রমিকরা জাহাজটি কেটে টুকরো টুকরো করে অপসারণের কাজ চালাচ্ছেন। উদ্ধার কাজে জড়িত শ্রমিকরা জানান, কয়েক দশক ধরে নদীর তলদেশে থাকা জাহাজটির গায়ের রঙ প্রায় অক্ষুন্ন রয়েছে এবং এর কাঠামোর প্লেটগুলো এখনও খুব মজবুত।

পুরোনো এই জাহাজটি তোলা হওয়ার খবর শুনে অনেকে উৎসুক হয়ে তা দেখতে মেহেন্দীগঞ্জে ভিড় করছেন। এদের একজন মো. জাহাঙ্গীর আলম পাশের ভোলা জেলা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর আগের ডুবে যাওয়া জাহাজটি দেখতে স্পিডবোট ভাড়া করে এসেছি। এত বড় মেশিন আগে কোথাও দেখিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি সূত্র জানায়, ব্যক্তি মালিকানার কোনো নৌযান ডুবে গেলে তা উদ্ধারের জন্য তিনবার চিঠি পাঠানো হয়। তিনবার চিঠি দেয়ার পরও যদি সাড়া না আসে, তাহলে সেই নৌযানকে নিলামে তোলার বিধান রয়েছে।
 
এমন বিধান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিআইডব্লিউটিএর সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের বরিশালের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল বাকী বলেন, ‘মেহেন্দীগঞ্জের ওই নৌযানটি উদ্ধার করা হচ্ছে এটা সত্য। তবে ওই এলাকাটি চাঁদপুরের আওতায় পড়ে।’
 
স্থানীয় একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, ১৯৯২ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম থেকে খুলনার উদ্দেশে বৈদ্যুতিক মালামাল বোঝাই করে যাত্রা করছিল এমবি মোস্তাবি নামের জাহাজটি। পথে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আলীমাবাদ ইউনিয়নের মিঠুয়া সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ জাহাজটি নিমজ্জিত হওয়ার পর ওই সময়ে সরকারের উদ্যোগে আংশিক কিছু মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পুরো জাহাজটি পানির নিচ থেকে তোলা সম্ভব হয়নি।
 
বর্তমানে জাহাজটির উদ্ধারে কাজ করছেন সাব-ঠিকাদার বরিশালের মো. ইউসুফ মিয়া। তার মতে, নিমজ্জিত জাহাজটি নিলামের জন্য ২০০৫ সালে বিআইডব্লিউটিএ দরপত্র আহ্বান করে। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ২০ লাখ টাকায় নিলাম পান খুলনার অগ্রণী ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আনসার উদ্দিন।
 
তবে সম্প্রতি তিনি মারা যাওয়ার আগে কাজটি কিনে নেন বরিশালের মো. ইউসুফ মিয়া। তিনি জানান, ২০১২ সাল থেকে কয়েক দফা জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে গত চার মাস আগে পুনরায় প্রায় পাঁচ একর জমি খনন করে এবং ৪৮ ফুট গভীর চর খনন করে জাহাজটি তোলা সম্ভব হয়। উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হয়েছে তিনটি শক্তিশালী বিকে বার্জ, বিশেষ ধরনের ক্রেন, ডুবুরি এবং আধুনিক প্রযুক্তি।
জাহাজটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কত টাকায় কিনেছেন, তা ইউসুফ মিয়া জানাতে চাননি। তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮০ ফুট, প্রস্থ ১৪ ফুট এবং উচ্চতা ১৭ ফুট। জাহাজটির দামি যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিনসহ অন্যান্য মালামাল।
 
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা হানিফ রাঢ়ী বলেন, ‘এক সময় এখানে নদী উত্তাল ছিল। বৈদ্যুতিক মালামাল বোঝাই জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর বহু বছর কেটে গেছে। এরপর অনেকবার উদ্ধার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু কেউ এর কূল-কিনারা করতে পারেনি। প্রায় দশ বছর আগে এখানে চর পড়তে শুরু করে। চর দৃশ্যমান হওয়ার পর জাহাজ উদ্ধারের চেষ্টা সফল হয়েছে।’
 
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাহাজটি উত্তোলন করছে। বর্তমানে এটি কেটে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/