• বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন

বাউফলে স্থায়ী বন্দোবস্ত জমি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘাতের শঙ্কা

হারুন অর রশিদ, বাউফল প্রতিনিধি / ৭ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চর কচুয়া মৌজায়  প্রায় ৩৫ বছর আগে ভূমিহীন কৃষকদের স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া ১২০ একর  জমি অবৈধভাবে একটি প্রভাবশালী মহলকে  চাষাবাদের একসনা  (লিজ)  অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ২শতাধিক কৃষক।  এ ঘটনায় বিদ্যমান দুইপক্ষের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
 বন্দোবস্ত দেওয়া জমি অবৈধভাবে এক বছর মেয়াদি লিজ বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
বন্দোবস্ত জমির মালিকদের ভাষ্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,  উপজেলার চরকচুয়া মৌজায়  সরকার ১৯৭৩ ও ১৯৯৪ সালে ২০৮জন কৃষককে প্রায় ৪০৮ একর জমি বন্দোবস্ত দেয়। বন্দোবস্ত পাওয়া কৃষকরা  নিয়মিত খাজনা দিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর সাবেক  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সহকারি কমিশনার (ভূমি)  আমিনুল ইসলাম বন্দোবস্তকৃত ১২০ একর জমি নামেবেনামে একটি প্রভাবশালী মহলকে এক বছর মেয়াদে চাষাবাদের (লিজ) অনুমতি দেয়। অনুমতি নিয়ে বন্দোবস্তের জমি দখল করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একাধিকার ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এনিয়ে রক্ষক্ষয়ী সংঘাত ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বন্দোবস্ত গ্রহিতা জমির মালিকরা ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছে। এবছরও তারা  জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। তবে নতুন করে লিজ নেওয়া ব্যক্তিরা জমিতে চাষাবাদে বাঁধা দিচ্ছেন। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। অপরদিকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেওয়া জমি চাষাবাদ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিপাকে পড়েছেন চাষীরা।
বন্দোবস্ত গ্রহিতা  আ. খালেক মুন্সি  জানান,  ১৯৯৬ সালে সরকার আমাকে ২ একর জমি বন্দোবস্ত দেন। বন্দোবস্ত জমির দলিল নং ৫৪২৫। দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে আমি চাষাবাদ করে আসছি। সম্প্রীতি কয়েকজ ভূমি দস্যুরা ওই জমি লিজ নিয়েছেন দাবি করে জমি দখলের চেষ্টা করে।  আমি বাঁধা দিয়ে আমাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়।  পরে অবৈধভাবে দেওয়া লিজ বাতিলের দাবি ও আমার নিরপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপার ও ডিসি মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। নাজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মজিবর রহমান মোল্লা জানান, সরকার আমাদের ২০৮জন   কৃষকদের মাঝে  ৪০০ একক জমি বন্দোবস্ত দলিল দেয়। এই জমির অধিকাংশই নদীতে বিলীন হয়ে  গেছে। প্রায় ১৫০ একর জমি চাষাবাদের যোগ্য। সেই জমিতে আমরা বছরের পর বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছি। সাবেক ইউএনও আমিনুল ইসলাম অবৈধ সুবিধা নিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলকে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে এক বছর মেয়াদে লিজ দেন। ওই প্রভাবশালী মহল নামে বেনামে অবৈধভাবে লিজ নিয়ে আমাদের হয়রানি করছে আসছে। জমিতে চাষাবাদে বাধা দিচ্ছে। মারধর ও প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়ে আসছে। লিজ বাতিলের দাবি করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। নাসির উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, আমরা প্রান্তিক কৃষক। বন্দোবস্তের জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। এ বছর আমাদের চাষাবাদে একটি মহল বাধা দিচ্ছে। তারা অবৈধ লিজের কাগজ দেখিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। আমরা এর সুষ্টু সমাধান চাই। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এক বছর মেয়াদে চাষাবাদের অনুমতি নেওয়া ব্যক্তিরা। তাদের পক্ষ থেকে নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা কাউকে ভয়ভীতি দেখায়নি। এসিল্যান্ড আমাদের  ২৪জনকে ১২৯ একর জমি চাষাবাদের অনুমতি দিয়েছেন , সেই মর্মে আমরা  ভোগদখল করতে চাই। তাদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।
তবে এবিষয়ে সাবেক ইউএনও ও ভারপ্রাপ্ত এসিল্যান্ড আমিনুল ইসলামের কোনো বক্তব্য  পাওয়া যায়নি। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তাকে বাউফল থেকে বদলি করা হয়েছিল।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সোহাগ মিলু বলেন, আগের সহকারি কমিশনার জমির লিজ দিয়েছেন।  উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিষয়ে আমরা প্রতিবেদন চেয়েছেন। প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালেহ আহমেদ বলেন, বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/