আরিফিন তুষার বয়সে তরুণ হলেও বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলে অনেক পরিপক্ক ছিল। এ কারণে সে আমাদের বয়সে ছোট হলেও আমরা অনেক সময় তাঁর পরামর্শ নিতাম। তিনি সাংবাদিকতায় যেমন পরিশ্রমি ছিলেন, তেমনি অল্পতেই মুখের হাসি এবং আচার ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারতো। অসময়ে তাঁর চলে যাওয়া আমাদের হৃদয় বিদির্ন করেছে।
দৈনিক কালবেলার ব্যুরো প্রধান ও বরিশাল প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আরিফিন তুষারের মৃত্যুতে শোক সভা ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানে তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও সহকর্মিরা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের হলরুমে এ শোক সভা আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম খসরু। এসময় আরিফিন তুষারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও তার সহকর্মিরা।
তারা বলেন, জন্মের পর মৃত্যূ অনিবার্জ এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিছু মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। আরিফিন তুষারের মৃত্যুটিও আমাদের সেইভাবে ব্যাথিত করেছে।
তুষার আমাদের স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ হয়ে আছে। হৃদয়ের পাতায় থাকবে। তবে হৃদয় বিদির্ন হয় তখন, যখন তুষারের দেড় বছরের ছোট্ট ছেলের মুখের দিকে তাকাই, যখন তুষারের অল্প বয়সী স্ত্রীর দিকে তাকাই।
তারা বলেন, তুষার আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছে। আমরা যেনো ওর ছেলেটিকে ভুলে না যাই, পরিবারটিকে যাতে ভুলে না যাই। যে যার অবস্থান থেকে পাশে থাকবেন। আমরা চাই তুষারের স্ত্রী এবং সন্তনকে হৃদয়ে আকড়ে রাখতে। আমরা একটু চেষ্টা করলে ওর পরিবারটা ভালো থাকবে।
প্রেসক্লাব সদস্য বেলায়েত বাবলুর সঞ্চালনায় শোক সভায় বক্তব্য রাখেন- আরিফিন তুষারের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ভূঁইয়া, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ, মেহেরুননেছা বেগম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চুন্নু, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী আল মামুন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক পুলক চ্যাটার্জ, কার্যনির্বাহী সদস্য কমল সেনগুপ্ত, কোষাধ্যক্ষ সুখেন্দু এদবর, সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ আলম, বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হীরা প্রমুখ।
এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শোক সভা শুরু হয়। পরে আরিফিন তুষারের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সবশেষ তুষারের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন বরিশাল বাইতুল মোকাররম মসজিদের ইমান মাওলানা মিজানুর রহমান।
এসময় আরিফিন তুষারের দেড় বছরের শিশুপুত্র আরহাম, স্ত্রী সানজিদা সাবিহা, ভাই হিমেল এবং রিফাত আবরারসহ সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক গ্রামের বাড়িতে আরিফিন তুষারের রুহের মাগফেরাত কামনায় পরিবারের উদ্যোগে দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন দিবাগত রাত ১০টায় বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তার সহকর্মরা। এ উপলক্ষে কোরআন খতম করানো হয়। পরে রাতে পাঁচ শতাধিক অসহায়, দুস্থ এবং ছিন্নমুল মানুষের মাঝে খিচরি বিতরণ করা হয়।
এর আগে গত ০৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর রোডের নিজ অফিসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শ্বাসকষ্ট এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কালবেলার বরিশাল ব্যুরো প্রধান আরিফিন তুষার। দ্রুত তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর। তিনি দেড় বছরের পুত্র সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা এবং দুই ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাষার বরিশাল প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও প্রেসক্লাব সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক ফোরাম বরিশালের নির্বাহী সদস্য এবং জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সম্পাদকীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন
https://slotbet.online/