শিক্ষক সংকট নিরসনসহ ৭ দফা দাবিতে বরিশাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) বেলা ১২ টায় জেলা প্রশাসকের নিকট শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিদাওয়া সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে। যে স্মারকলিপির অনুলিপি অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা, সচিব, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সকল কলেজের অধ্যক্ষ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেনাবাহিনীর স্থানীয় দায়িত্বরত কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করা হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
এরআগে সকাল ১০ টায় শাটডাউন কর্মসূচির মাঝেই মাথায় লাল কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে সেই মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়। সেখানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে এবং পরবর্তীতে স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর শিক্ষক সংকট, অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রসংঙ্গে দেয়া স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন- আমরা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহের ছাত্র সমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের শিক্ষক সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছি। সাবেক বস্ত্র উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন আমাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষন করে দ্রুততম সময়ে দাবিসমূহ সমাধান করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তিনি যাওয়ার পর উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সহ সচিব র সাথে মিটিং করি। সচিব মহোদয় আমাদের কথা দিয়েছিলেন আগামী ২ মাসের মধ্যে যুগোপযোগী নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করে শিক্ষক সংকটের সমাধান করবেন, আমাদের ছাত্রদের সাথে আবার বসবেন কিন্তু আজ ৭ মাস পার হওয়ার পরও উনি এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ
নেন নি।
পরিতাপের বিষয় এই যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক না থাকলেও ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসলেও নতুন নতুন কলেজ ঠিকই উদ্বোধন করছেন কিন্তু শিক্ষক সংকটের সমাধান করেন নি। গত ১০ মে মাদারীপুর ও সিলেটে কোন শিক্ষক ছাড়া শুধুমাত্র অধ্যক্ষ আর বাবুর্চি দিয়ে কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহে সিট সংখ্যার সমান ফর্ম বিক্রি হয় না শুধুমাত্র অপদার্থ প্রশাসনের কারনে। মাদারীপুরে ১২০ সিটের বিপরীতে ফর্ম বিক্রি হয়েছে ৮০ টা। অথচ ২০১১-১২ সালে ৫ কলেজে ফরম বিক্রি হত ১১০০০।
এসব অব্যাবস্থাপনা ও শিক্ষক সংকট দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই ৮ টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবিতে ৮টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শাটডাউন করতে বাধ্য হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে এবং ল্যাবসমূহ রক্ষনাবেক্ষন ও সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে; তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধিত নিয়োগবিধি পাশ করতে হবে; ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের অপসারণ করা হবে- মর্মে ভিসি স্যার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি চাই; আদর্শ কাঠামো মেনে অধিভুক্তি নবায়ন করতে হবে; একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে তার ওপর ভিত্তি করে ক্লাস, পরীক্ষা এবং ফলাফল প্রকাশ করতে হবে; টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে; সাপ্লিমেন্টারি পরিক্ষা চালু রাখতে হবে ও রিটেক ফি কমাতে হবে।
স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষার্থী মাহমুদ বলেন, দাবিসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে সকল কলেজের চলমান কমপ্লিট শাটডাউন অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে বস্ত্র অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচির মত কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, অবিলম্বে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাবসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ এবং সচল রাখতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে, তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধিত নিয়োগবিধি পাশ করতে হবে, সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে এবং রিটেক ফি কমাতে হবে। নতুবা অনির্দিষ্ট কালের জন্য শাটডাউন চলবে। কেননা এত কম সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে কিছুতেই কলেজ চলতে পারে না।
কর্মসূচির শুরুতে চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী রহমত আলী শিফাতের অকাল মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে আন্দোলনকারীরা।
https://slotbet.online/