• মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ন

মেহেন্দিগঞ্জে সামিউলের কবরে বিমান বাহিনীর শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার / ৩২ পড়া হয়েছে
প্রকাশিত : শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে নিহত সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র সামিউল করিমের কবর জিয়ারত করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

শনিবার (২৬ জুলাই) বরিশালের নদীবেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের দেশখাগকাটা গ্রামের চিরনিদ্রায় শায়িত সামিউলের কবর জিয়ারতের পূর্বে বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় কবর জিয়ারত শেষে মোনাজাতে অংশগ্রহণ নেয়। স্থানীয় মসজিদের খতিব মোনাজাত পরিচালনা করেন।

পরবর্তীতে বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিহত সামিউলের বাবা ও মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সমবেদনা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধানের পক্ষে প্রতিনিধি দলের গ্রুপ ক্যাপ্টেন মীর্জা নাজমুল কবীর বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। নিহত সামিউলের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রত্যন্ত এলাকায় এসেছি শুধু সামিউলের কবর জিয়ারতের জন্যই নয়; তার পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে।

স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবো :

একের পর এক স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নিহত সামিউলের বাবা রেজাউল করিমকে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমি নিজেই সামিউলকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সামিউল যখন স্কুলের দ্বিতীয় তলায় উঠছিলো তখনও কেন যেন আমি ওরদিকে তাকিয়ে ছিলাম।

আবার দুপুরে ছুটির পর আমি গেটে দাঁড়িয়ে ছেলেকে নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। সামিউল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো। ঠিক তখনই আকস্মিকভাবে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে একটি জ্বলন্ত অংশ সামিউলের শরীরে আঘাত করে। এতে সামিউলের শরীরের পেছনের অংশ পুড়ে যায়।

আবেগাপ্লুত রেজাউল করিম বলেন, আমি আমার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাকে বাঁচাতে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলাম। এমন সময় একজন সেনা সদস্য নিজের গায়ের ইউনিফর্ম খুলে দিয়ে সহায়তা করেন। পরে সামিউলকে সামরিক হেলিকপ্টারযোগে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানায়, সামিউলকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

রেজাউল করিম আরও বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবো কিন্তু আমার চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে গেল। আমার ছেলেটা জ্বলছিল, আমি কিছুই করতে পারিনি। সেই লোমহর্ষক দৃশ্য এখনও চোখের সামনে ভাসছে। যেকারণে সেই থেকে একটি রাতেও আর ঘুমোতে পারিনি। কীভাবে সামিউলকে ছাড়া বাঁচবো জানি না।

উল্লেখ্য, সামিউল করিমের পৈত্রিক নিবাস ছিলো মেহেন্দিগঞ্জের সদর ইউনিয়নের রুকুন্দি গ্রামে। তবে নদীভাঙনে তাদের বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ায় পরিবারটি রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করে আসছিলো। সামিউলের বাবা রেজাউল করিম শামীম একজন ব্যবসায়ী এবং মা রেশমা বেগম মেহেন্দিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সামিউল ছিলো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। একই স্কুল থেকে বড় বোন স্নেহা এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। সামিউল করিমের নানা প্রয়াত মোস্তফা কামাল ছিলেন চাঁনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।

দুর্ঘটনার পর সামিউলের মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে গত ২২ জুলাই তার গ্রামের বাড়িতে এনে জানাজা শেষে নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ রকম আরো সংবাদ...
https://slotbet.online/