ডেঙ্গুর প্রকোপে বিপর্যস্ত বরগুনা। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেই আইসিইউ সুবিধা, ফলে গুরুতর রোগীদের বরিশাল বা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এতে বাড়ছে রোগীদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুঝুঁকি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত জনবলসহ আইসিইউ স্থাপনের দাবি সচেতন মহলের। আইসিইউ স্থাপনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের চিঠি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
৩০ জুন রাতে আইসিইউ এর অভাবে বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বরিশাল-শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন বরগুনা শহরের কসমেটিকস ব্যবসায়ী বিপ্লব। বিপ্লবের মৃত্যুর ১ দিন পর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বিপ্লবের স্ত্রী শিপ্রা রানী। তাকেও নিয়ে আসা হয়েছিলো বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালে ভর্তির ১দিন পরই তার প্লাটিলেট কমে দাড়ায় ৩৬ হাজারে। হাসপাতালে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) না থাকায় তাকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
শুধু বিপ্লব কিংবা শিপ্রাই নয়। প্রতিদিনই নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অর্ধশতাধিক রোগী। কিন্তু চিকিৎসা সুবিধার ঘাটতি, বিশেষ করে আইসিইউ না থাকায় অনেক রোগীকেই পাঠানো হচ্ছে বরিশাল বা ঢাকায়। এই দীর্ঘ যাত্রায় দুর্বল রোগীদের জন্য বাড়ছে ঝুঁকি কেউ কেউ পথেই মারা যাচ্ছেন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বরগুনায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫২২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২৩জন। সরকারি হিসেবে জেলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৩০ জন। প্রতিদিনই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী না থাকায় ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স মোতায়েন করা হয়েছে বরগুনা জেনালে হাসপাতালে। মজুদ রয়েছে ওষুধ ও স্যালাইন। তবুও সীমাবদ্ধতার কারণে সবার জন্য পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছে না চিকিৎসকরা। তাই দ্রুত আইসিইউ স্থাপনের দাবি সচেতন মহলের।
ডেঙ্গু রোগীর স্বজন রুবেল হোসেন জানান ‘শুধু শয্যাসংকট নয়, গুরুতর অবস্থার রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিইউ সুবিধার অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেও অনেক সময় আমরা কিছুই করতে পারি না আমাদের বরিশালে রেফার করে দিছে আমরা কি ভাবে বরিশাল যাবো হাতে টাকা নেই বরগুনায় যদি আইসিইউ থাকতো তাহলে ভালো হতো ।
বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক, মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘এই জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইসিইউ স্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় আইসিইউ সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করা অতীব প্রয়োজন।’ ডেঙ্গুর মতো প্রাণঘাতী রোগ মোকাবেলায় শুধু সচেতনতা নয়, জরুরি চিকিৎসা সুবিধাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাড়তেই থাকবে মৃত্যুর মিছিল।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাসকিয়া সিদ্দিকী বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও সমানভাবে ভর্তি এবং সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পাওয়ায় ব্যালেন্স হচ্ছে। আর এ কারণেই এখন পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে আমরা স্থান দিতে পারছি। তবে সামনের দিনগুলোতে যদি রোগী সংখ্যা আরও বেশি হয়, তাহলে ওই সময় পরিস্থিতি কেমন হবে তা এখন বলা যাচ্ছে না।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ‘বরগুনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আইসিইউ স্থাপনের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি
https://slotbet.online/