অস্বাভাবিক জোয়ারে বরিশাল বিভাগের সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টার পরিমাপ অনুযায়ী এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে অতি জোয়ারে ড্রেন ও খাল দিয়ে কীর্তণখোলার পানি প্রবেশ করে বরিশাল নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোডসহ বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়েছে। নগরীর সবগুলো ড্রেনের কীর্তণখোলার সঙ্গে যুক্ত।
এছাড়া নগরীর ২৪ নম্বও ওয়ার্ডের জিয়ানগর, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খ্রীষ্টান কলোনী, পলাশপুর, মোহাম্মদপুর ও রসুলপুর এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের বিভিন্ন নদীর ১৯টি পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টার পরিমাপ অনুযায়ী সবগুলো পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিযে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশাল নগরীর সংলগ্ন কীর্তণখোলা ও ঝালকাঠীর বিষখালী নদীতে বিদপসীমার ২৩ সেন্টিমিটর ওপর দিয়ে, বরগুনার বেতাগীর বিষখালীতে ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জ সংলগ্ন পায়রা নদীতে ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ভোলা সংলগ্ন মেঘনায় ২৪ সেন্টিমিটার এবং তেতুলিয়ায় ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নগরীর বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর টানা বৃষ্টিতে বরিশাল কার্যত অচল হয়ে গেছে। ভোর থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে জনগুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ভাঙা সড়ক নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে প্লাবিত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে গেছে। চাকরিজীবীরা যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছে। এদিকে বুধবার সকাল থেকে বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ৬টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপ জেলা ভোলা ও আশপাশের নদীবেষ্টিত এলাকাগুলোর সঙ্গে বরিশালের নৌ যোগাযোগ দিনভর বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। বন্ধ ছিল বিভিন্ন পণ্যসহ দৈনিক পত্রিকার সরবরাহও।
দিনভর বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর বটতলা, পলাশপুর, কবি জীবনানন্দ দাশ সড়ক, রসুলপুর, পলাশপুর, ভাটিখানা, কাউনিয়া, আলেকান্দা, রূপাতলী হাউজিং, ধান গবেষণা রোড, জিয়ানগর, বিএম স্কুল রোড, আমানতগঞ্জ, কলেজ এভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমেছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারাও পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে আছেন।
ভোলার লঞ্চযাত্রী আবদুর রহমান বলেন, বাড়ি যেতে টার্মিনালে এসে জানতে পারি লঞ্চ চলবে না। এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছি। নগরীর শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা ইফতি জানান, বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট ও নিচু অংশের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ কারণে ঘরবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা শেখ সেলিম রেজা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলাসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ নদীর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বিভাগের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি। ###
https://slotbet.online/