চার মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে আগামী সোমবার দেশে ফিরবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশে ফিরছেন তার দুই পুত্রবধূ, অর্থাৎ তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিও।
এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতির নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে কর্মদিবস হওয়ায় ওইদিন কোনো ধরনের দলীয় কর্মসূচি না রাখার কথা জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল ডিএমপি ও বিএনপি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বিএনপি জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। পুরোপুরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাওয়া না গেলেও লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও সফরসঙ্গীরা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছেন। আর পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন তারেক রহমান।
লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকবেন মোট আটজন। দুই পুত্রবধূ ছাড়াও অন্যরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. আমিনুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান এবং দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। এমনকি নেতাকর্মীদেরও ওইদিন রাস্তায় যান চলাচলে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৪ এপ্রিল (রোববার) খালেদা জিয়া রওনা হলে ৫ তারিখ (সোমবার) বেলা ১১টার দিকে দেশে এসে পৌঁছবেন। কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটা উনাকে লন্ডনে নেয়ার জন্য পেয়েছিলাম, সেটা এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে, টেকনিক্যাল রিজিয়নস। সেজন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন বাংলাদেশ বিমানেই উনি আসবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘ বিমান জার্নির পর খালেদা জিয়াকে দ্রুত সময়ে বাসভবনে নেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, লন্ডনে চিকিৎসা শেষে সোমবার সকালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে আসছেন। উনি দীর্ঘ জার্নি করে আসবেন, এজন্য বিমানবন্দরে নামার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে উনাকে বাসায় নেয়ার পরামর্শ রয়েছে চিকিৎসকদের। পাশাপাশি সোমবার কর্মদিবস হওয়ায় ওইদিন কোনো ধরনের যানজট ভোগান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। এজন্য চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেই। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটাই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে—কেউ যেন সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করেন।’
এদিকে ডিএমপি সূত্র জানায়, চার মাস পর খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ও বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। বিশেষ করে গুলশান ২ নম্বরে খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র যে ৭৯ নম্বর সড়ক, তার দুই পাশের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট এবং ওই এলাকায় নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাসভবন ঘিরে থাকবে গোয়েন্দা তৎপরতা। সব মিলিয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে থাকবেন তিনবারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বাসভবন ঘিরেও। তিনি ধানমন্ডিতে বাবার বাসভবনে থাকবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (প্রটেকশন অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি) সানা শামীনুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গুলশানের বাসভবনকে ঘিরে ও উনার মুভমেন্টের বিষয়ে আলাদা কাজ চলছে। এর সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগকেও যুক্ত করা হয়েছে। তারাও সে অনুযায়ী কাজ করছে।’
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার দিন সড়কে যান চলাচলে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয় সেজন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বাসায় যেতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এজন্য দলটির নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকবে, কোথাও যেন কোনো ধরনের জমায়েত না করেন। কেননা এতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি ওইদিন ওয়ার্কিং ডে হওয়ায় অফিসগামীদের যেন কোনো যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সে বিষয়টিও বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে লন্ডন ক্লিনিকে রেখে প্রথমে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে নেয়া হয় ছেলে তারেক রহমানের বাসায়।
https://slotbet.online/