পটুয়াখালীর মহিপুর দেশের অন্যতম বৃহত্তর মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত। এই বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা সহস্রাধিক ভিবিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান।এ বন্দরের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরোনো খাস পুকুরটি এখন দখল-দূষণে বিলুপ্তির পথে।এ পুকুরটি এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে।
নদীতে লবনাক্ত পানি থাকায় গোসল ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো এই পুকুরের পানি। জেলেরা সমুদ্রযাত্রার সময় ড্রাম ভর্তি করে এখান থেকেই প্রয়োজনীয় পানি নিয়ে যেতেন। সেই পুকুরটি এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।পুকুরটি খননে মহিপুর সদর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান পরিষদের সভার রেজুলেশনসহ ২০২০ সালের ২৬ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন পাঠালেও প্রশাসন থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে পুকুরটি এখন ধ্বংসের মুখে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে, ছড়াচ্ছে ময়লার দুর্গন্ধ। এতে শুধু পুকুরটিই ধ্বংস হয়নি বরং আশেপাশের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।একসময়ে যে পুকুরের পানি মহিপুরবাসীসহ স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জেলেদের গোসলসহ দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য ছিলো, সেটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। এছাড়া কালীবাড়ি পুকুর ও হিন্দুপট্টি এলাকার আরেকটি খাস পুকুরও এখন দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহ্ আলম মুন্সী বলেন, ‘এই পুকুর প্রায় শত বছর আগে খনন করা হয়েছিলো। মহিপুর বাজারের একমাত্র খাস পুকুরটি তখন এলাকার মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস ছিলো। এটি শুধু একটি জলাধার নয়; এটি মহিপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক। বর্তমানে পুকুরটি দখলবাজদের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।’
জেলে আব্দুল জলিল বলেন, ‘এই পুকুরটি আমাদের জীবনের অংশ ছিলো। এখানে আমরা একসময় গোসল করতাম এবং সমুদ্রে মাছ শিকারে যাবার সময় এখান থেকে রান্নার পানি নিয়ে যেতাম। এখন বিশুদ্ধ পানি পেতে আমাদের বেগ পেতে হয়। দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ মোল্লা বলেন, ‘একসময় পুকুরটি একমাত্র বিশুদ্ধ পানির উৎস ছিলো। বাজারের ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই পানির প্রয়োজন মিটাতো। পুকুরটি ধ্বংস হওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পুকুরটি পুনরুদ্ধার করা হলে ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী উপকৃত হবে। এখানে কখনো অগ্নিকাণ্ড হলে এই পুকুরের পানি আগুন নিভাতেও সহায়ক হবে।
এলাকাবাসী অবিলম্বে দখলদারদের উচ্ছেদ পূর্বক এবং পুকুরটি পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। পুকুরটি রক্ষা করতে না পারলে মহিপুরের পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পুকুরটি পুনরায় খনন করে সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পের মাধ্যমে খননের ব্যবস্থা করতে পারেন। আমি বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মহিপুরে একটি পুকুর এবার খনন করা হয়েছে। তবে কোনটা তা ঠিক মনে নেই। আপনি যে পুকুরের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন এটার খোঁজ নিয়ে, পুকুরটি খনন ও সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
এ রকম আরো সংবাদ...