স্টাফ রিপোর্টার :: জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্য এবং শতভাগ নবায়নযোগ্য জ¦ালানির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করতে বরিশাল আজ জেগে উঠেছে এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে। প্রান্তজন ট্রাস্ট, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ঈখঊঅঘ) ও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইডএঊউ)- এর যৌথ উদ্যোগে বরিশাল সার্কিট হাউজ এর সামনে এক শক্তিশালী মানববন্ধন গড়ে তুলেছেন।
ব্যানার ও স্লোগানের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে বাধা হয়ে থাকা জরুরি সমস্যাগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন- যেমন পুরনো অবকাঠামো, জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়া, উচ্চ বিনিয়োগ ঝুঁকি এবং নীতিমালার অকার্যকর বাস্তবায়ন। অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নাগরিক সমাজ, জলবায়ু কর্মী ও নীতিনির্ধারকরা একমত হয়েছেন: নবায়নযোগ্য জ¦ালানির পথে বাংলাদেশের অগ্রগতির মূল বাধা হলো অদূরদর্শী নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
যখন বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণ করা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে, তখন বরিশালের এই কর্মসূচি দেখিয়েছে যে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাগুলো এখনও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করছে। ধীর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, অর্থায়নের অভাব, দুর্বল গ্রিড অবকাঠামো এবং নবায়নযোগ্য প্রকল্পের জন্য অসম্পূর্ণ ট্যারিফ নীতি এই পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ। এই আন্দোলন কেবল বাধাগুলো চিহ্নিত করেনি, বরং একটি সবুজ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সুস্পষ্ট দাবি তুলেছে।
আন্দোলনের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: নবায়নযোগ্য প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদনের জন্য একক সেবা কেন্দ্র স্থাপন; স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি এবং নেট এনার্জি মিটারিং (ঘঊগ) বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড আধুনিকীকরণ; জাতীয় বিদ্যুৎ খাতের বাজেটে কমপক্ষে ২০% নবায়নযোগ্য জ¦ালানির জন্য বরাদ্দ করা; দেশীয় ব্যাংকগুলোর জ্বালানি খাতের অর্থায়নের কমপক্ষে ২৫% নবায়নযোগ্য প্রকল্পের জন্য নির্ধারণ; নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির ওপর আমদানি শুল্ক কমানো এবং ট্যারিফ শর্ত বাতিল; এবং “বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই” নীতি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ তৌহিদুল ইসলাম শাহাজাদা বলেন, এই আন্দোলন বরিশালের একটি সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ গড়ার দৃঢ় সংকল্পের প্রকাশ। নীতিমালার সংস্কার শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত বিষয় নয় বরং এটি টেকসই জীবিকা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং জাতীয় সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশালের সদস্য জনাব আক্তারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু ঝুঁকির সম্মুখভাগে থাকা আমাদের মতো কমিউনিটির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি টিকে থাকার প্রধান হাতিয়ার। এখনই সময় বাধাগুলো দূর করে সত্যিকারের টেকসই বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাওয়ার।
আরোহির নির্বাহী পরিচালক জনাব এটিএম খোরশেদ আলম বলেন , জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখে বরিশালের কৃষক- জেলে সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। নবায়নযোগ্য শক্তি আমাদের জন্য আশার আলো, এটাকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারে রূপান্তর করতে হবে। এই আন্দোলন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে জোট “সবুজ বাংলাদেশ জোট”। নীতি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এই দাবি আরও জোরালো হবে। সারা দেশে গড়ে ওঠা ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বরিশালের এই শক্তিশালী দাবি বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন ও সহনশীল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলাকে আরও বেগবান করবে।
https://slotbet.online/