বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোলার চরফ্যাশন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় পাঁচ সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে সহস্রাধিক গবাদি পশু। চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় এখনো তিন থেকে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়াও ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার দুই স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢালচরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি। চর কুকরি-মুকরির চর পাতিলা এলাকা ও মুজিবনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায়ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ তিন ইউনিয়নে হাজারের বেশি গরু-ছাগল পানিতে ভেসে গেছে।
মনপুরা উপজেলার কলাতলির চরসহ বাঁধের বাইরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে তিন হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু গবাদি পশু ভেসে গেছে। এখনো কিছু কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ, রমাগঞ্জ, ধলীগৌরনগর, চরভূতা ও পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ২০টি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত ৫০০টি বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রাম এবং অতিবৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির কারণে চরকচুয়াখালী এবং পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, চরফ্যাশনের তিনটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পানিবন্দি রয়েছে দুই হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বণিক জানান, মনপুরার কলাতলি ইউনিয়নে বাঁধ না থাকায় পানিতে সেখাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বাঁধের বাইরেও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তিন হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা জানান, মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার লালমোহনের সৈয়দাবাদ ও তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় বেড়িবাঁধ ছুটে যায়। এতে লালমোহনে ২০ মিটার ও তজুমদ্দিনে ১৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লালমোহনের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে এবং তজুমদ্দিন উপজেলার বাঁধ সংস্কার কাজ চলছে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলা জেলায় ২৪৩টি ঘের ও দুই হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ৪৭৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ১৪০টি মাছ ধরার ট্রলার ও ৬৫টি মাছ ধরার জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় মৎস্য বিভাগের অবকাঠামোসহ সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি ৭২ লাখ টাকা।
ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৮টি ঘরবাড়ি। এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
https://slotbet.online/