দিন দিন সারা দেশে মশার প্রকোপ বেড়েই যাচ্ছে, দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। মশার এ উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশার কয়েল ব্যবহার আমাদের দেশের মানুষের নিত্যদিনের অভ্যাস। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় অনেকেই মশার কামড় এড়াতে কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন। তবে খুব কম মানুষই জানেন, এই কয়েলের ধোঁয়া আমাদের শরীরের ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাময়িক স্বস্তির জন্য ব্যবহৃত এই কয়েল আসলে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
মশার কয়েলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েলের ধোঁয়া ঘরের বাতাসে সূক্ষ্ম কণার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। একটি কয়েল থেকে নির্গত ধোঁয়ার মাধ্যমে যে পরিমাণ সূক্ষ্ম কণা নির্গত হয়, তা ৭৫ থেকে ১৩৭টি সিগারেটের ধোঁয়ার সূক্ষ্ম কণার সমান। আবার একটি কয়েল থেকে নির্গত ধোঁয়ায় যে পরিমাণ ফরমালডিহাইড নির্গত হয় তা ৫১টি সিগারেটের ধোঁয়ার সমান এবং মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমা, অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ ধোঁয়া মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
তাছাড়া মশার কয়েল থেকে নির্গত ধোঁয়া আমাদের ঘুমের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুম যেকোনো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক গবেষণা অনুযায়ী, দৈনিক বদ্ধ রুমে মশার কয়েল জ্বালানোর কারণে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। কয়েলের ধোঁয়ায় থাকা সূক্ষ্ম কণা রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুমের মধ্যে মানুষ পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। অনেকেই রাতে কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন, অথচ তারা জানেন না এটি তাদের ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করছে। গভীর ঘুমের পরিবর্তে শরীর বারবার জাগ্রত হতে বাধ্য হয়, ফলে ঘুম পর্যাপ্ত হলেও তা কার্যকর হয় না। ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ক্লান্তি, একাগ্রতার অভাব, বিরক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ ধোঁয়া বেশি ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ তাদের শ্বাসযন্ত্র তুলনামূলক বেশি সংবেদনশীল। গবেষণায় দেখা গেছে, সারা রাত জ্বালিয়ে রাখা কয়েলের ধোঁয়া, স্নায়ুর কার্যকারিতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তাই মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কয়েল ছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যকর কিছু বিকল্পগুলো ব্যবহার করতে হবে, যা আমাদের ঘুমের গুণগত মান ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখার অভ্যাস গড়ে তুললে কিংবা মশারি, ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করলে, মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া অনেকে প্রাকৃতিক তেল বাঁ সুগন্ধিও ব্যবহার করে থাকে। তবে মশার কয়েলের এক অন্যতম বিকল্প হলো লিকুইড ভ্যাপোরাইজার। এটি ধোঁয়াবিহীন এবং মানুষের ঘুমের কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটায় না।
সাময়িক স্বস্তির জন্য ব্যবহৃত মশার কয়েল দীর্ঘমেয়াদে আমাদের শরীরে নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই আমাদের বিকল্প ও স্বাস্থ্যকর উপায় গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা যদি ধোঁয়াহীন ও নিরাপদ সমাধান বেছে নিই, তাহলে ভালো ঘুম নিশ্চিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে সুস্বাস্থ্যও বজায় রাখা সম্ভব।